কোয়ার্কের নতুন আবিষ্কারে মিলতে পারে মহাবিশ্বের জন্মরহস্যের চাবিকাঠি

নিউজ ডেস্ক | /DAILYNABARAJ24.COM

প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, সময়ঃ ১১:৪০


সম্প্রতি টপ কোয়ার্কের জোড়া আবিষ্কার করেছেন সুইজারল্যান্ডের অ্যাটলাস কোলাবোরেশনের একদল বিজ্ঞানী। দুটি সীসার পরমাণুর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো টপ কোয়ার্ক-অ্যান্টিকোয়ার্ক জোড়াকে শনাক্ত করেছেন তাঁরা। মহাবিশ্বের শুরুতে, মানে বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরে অত্যন্ত উত্তপ্ত ও ঘন ‘কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা’ অবস্থার মধ্যে যে ছয় কোয়ার্কই উপস্থিত ছিল, তা এ আবিষ্কারের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণিত হলো। ফিজিক্যাল লেটার জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা এমন একটি অবস্থা, যেখানে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যকার কোয়ার্ক ও গ্লুয়ন মুক্ত অবস্থায় অনেক শক্তিশালী পরিবেশে অবস্থান করে। একে অনেকে স্যুপ বা তরল অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে কোয়ার্ক স্যুপ বলেন। 

সমস্যা হলো, পদার্থের এমন অবস্থায় কোয়ার্কগুলো দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে। ফলে এক সেকেন্ডের লক্ষাধিক ভাগের একভাগ সময়ও টেকে না। বিজ্ঞানীদের মতে, বিগ ব্যাংয়ের পর তৈরি হওয়া কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা এক সেকেন্ডের কয়েক মিলিয়ন ভাগের একভাগ সময় টিকে ছিল। এরপর কণাগুলো একসঙ্গে মিলে সাধারণ পদার্থ তৈরি করতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়াকে বলে হ্যাড্রনাইজেশন।

মহাবিশ্বের এই আদিম অবস্থাটি বুঝতে গবেষকরা শক্তিশালী কণাত্বরকযন্ত্র  ব্যবহার করেন। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ভারী কণাগুলোর সংঘর্ষ ঘটানো হয়। এতে খুব ক্ষুদ্র সময়ে তৈরি হয় কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা। সংঘর্ষ থেকে নির্গত কণাগুলোর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এ প্লাজমা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ছয় ধরনের কোয়ার্কের মধ্যে টপ কোয়ার্ক সবচেয়ে ভারী। ফলে কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমার বিবর্তন বোঝার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে এদের আয়ু সবচেয়ে কম, মাত্র ১০-২৫ সেকেন্ড। হ্যাড্রন গঠনের আগেই এটি ক্ষয় হয়। ফলে একে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন।

অন্যদিকে, ভারী আয়নের সংঘর্ষে তৈরি কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা থাকে প্রায় ১০-২৩ সেকেন্ড। তুলনামূলক কিছুটা বেশি সময় পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে।

নতুন গবেষণায় অ্যাটলাস কোলাবোরেশনের বিজ্ঞানীরা দুটি সীসার পরমাণুর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে টপ কোয়ার্ক জোড়া শনাক্ত করেন। সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত লার্জ হ্যান্ডন কোলাইডার (LHC) যন্ত্র ব্যবহার করেন তাঁরা। ডিলেপ্টন চ্যানেল অব ডিকয় (Dilepton channel of decoy) প্রক্রিয়ায় তাঁরা ক্ষয় হওয়া কণাগুলো বিশ্লেষণ করে টপ কোয়ার্ক জুটির অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন।

এই প্রক্রিয়ায়, টপ কোয়ার্ক ক্ষয় হয়ে একটি বটম কোয়ার্ক ও একটি ডব্লিউ বোসন-কণায় পরিণত হয়। এরপর ডব্লিউ বোসন ভেঙে পরিণত হয় নিউট্রিনো এবং একটি ইলেকট্রন অথবা মিউওন কণায়। বিজ্ঞানীরা সীসার দুটির কণার এ সংঘর্ষের বিশ্লেষণ ও হিসেব-নিকেশ পরিসংখ্যানগতভাবে ৫.০৩ সিগমা অর্জন করেছে। এর অর্থ, তাঁদের গবেষণায় হিসেবের ত্রুটির পরিমাণ খুবই কম। 

এর আগে সীসা ও প্রোটনের সংঘর্ষে টপ কোয়ার্ক জুটি শনাক্ত হয়েছিল, তবে এবার সীসা-সীসা সংঘর্ষে প্রথমবারের মতো এমনটি ধরা পড়ল।

গবেষকেরা বলছেন, ‘আমাদের এ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমার প্রাক-সমসত্ব অবস্থায় সব ধরনের কোয়ার্কই উপস্থিত ছিল। এ অবস্থা মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার অনুরূপ। ফলে ভবিষ্যতের কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা ও প্রাথমিক মহাবিশ্ব কেমন ছিল, তা বোঝার জন্য নতুন দুয়ার খুলে গেল।’

মহাবিশ্ব, অর্থাৎ আমাদের প্রকৃতিকে বোঝার জন্য এ ধরনের গবেষণা খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


 

 


সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ইফতেখার আহমেদ টিপু

ফোন ও ই-মেইল +8801718463345 mofo.nabaraj@gmail.com dailynabaraj24@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয়

১২ বিপনন বা/এ, সোনারতরী টাওয়ার, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

© dinajpurnews24.com ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।